আপনারা নিশ্চই ডলার শব্দটি শুনেছেন। ডলার হল আমেরিকান কারেন্সি এটাও নিশ্চই জানেন। আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে একমাত্র বিনিময় মাধ্যম হল ডলার এটাও অনেকেই জানেন।যদিও আন্তর্জাতিক কিছু লেনদেন ইউরো এবং ইয়েন এর মাধ্যমে হয়ে থাকে কিন্তু এদের প্রভাব সামান্যই বলা চলে। এবং আজও গোটা বিশ্বের 90% এরও বেশী আন্তর্জাতিক
  
BMR Gallery❯❯ News❯❯ how american dollar become world currency
ডলার কিভাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে মান্যতা পেল,ডলার কিভাবে ওয়ার্ল্ড কারেন্সি-তে পরিণত হল
bmrgallery.Com | Updated:Mar 20, 2020, 09:08PM IST
আপনারা নিশ্চই ডলার শব্দটি শুনেছেন। ডলার হল আমেরিকান কারেন্সি এটাও নিশ্চই জানেন। আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে একমাত্র বিনিময় মাধ্যম হল ডলার এটাও অনেকেই জানেন। যদিও আন্তর্জাতিক কিছু লেনদেন ইউরো এবং ইয়েন এর মাধ্যমে হয়ে থাকে কিন্তু এদের প্রভাব সামান্যই বলা চলে। এবং আজও গোটা বিশ্বের 90% এরও বেশী আন্তর্জাতিক লেনদেন আমেরিকান ডলারে হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হল যে, কিভাবে ডলারের গুরুত্ব এতটা বেড়ে গেল? সারা পৃথিবীতে অন্যান্য দেশের মুদ্রাকে পিছনে ফেলে কিভাবেই বা আমেরিকান ডলার ওয়ার্ল্ড কারেন্সি-তে পরিণত হল? সবার মনে কৌতূহল জাগানো এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানব। তো চলুন শুরু করা যাক।
1944 সালের পর থেকে আমেরিকান ডলার ওয়ার্ল্ড কারেন্সি হিসাবে মান্যতা পেতে শুরু করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশগুলিতে বিভিন্ন স্থানে দ্রুত পরিষেবা প্রদান করা জরুরী হয়ে পড়ে। এবং দ্রুত পরিষেবা প্রদানের জন্য দেশগুলিতে বেশী বেশী মুদ্রা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এর ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ দেশ তাদের গৃহীত মুদ্রানীতি বদল করতে শুরু করে এবং ফিক্সড ভ্যালু অফ কারেন্সি নীতি থেকে সরে এসে ফ্লেক্সিবল ভ্যালু অফ কারেন্সি নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল আরও বেশী ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্বক । তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায় যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে রি-ডেভেলপমেন্ট কিভাবে করা যায়।
আর এই উদ্দেশ্যে 1944 সালের জুলাই মাসে আমেরিকার ব্রেটন উড নামক এক স্থানে একটি সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় 44টি চুক্তিবদ্ধ দেশের 730জন প্রতিনিধি অংশগ্রহন করে। এই সভা ব্রেটন উডস কনফারেন্স নামে পরিচিত।
এই সভায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আই.এম.এফ এর গঠন সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে এমন একটি সিদ্ধান্ত ছিল যে সিদ্ধান্ত আমেরিকাকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে যে কারণ ছিল সেগুলি হল-
● দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যদি কোনো দেশ সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে দেশ ছিল আমেরিকা।
● যেখানে অন্যান্য দেশগুলির অর্থনীতি প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হয় সেখানে কম ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকার অর্থনীতি তখনও ছিল সবচেয়ে বড় এবং মজবুত।
● আমেরিকান ডালারই ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতে সবচেয়ে বিশ্বস্ত অর্থাৎ যাকে ভরসা করা যায় এবং স্থিতিশীল।
● আমেরিকার সঙ্গে ছিল ব্রিটেনের সমর্থন।
এ সমস্ত বিবেচনা করে আমেরিকান ডলারকে ওয়ার্ল্ড রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি আই.এম.এফ এবং বিশ্ব ব্যাংক এর সমস্ত লেনদেন এর ক্ষেত্রেও আমেরিকান ডলার বাধ্যতামূলক করা হয়।
বিনিময়ে আমেরিকা প্রতিশ্রুতি দেয়
● আমেরিকা শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুসারে এবং সীমিত ডলার প্রিন্ট করবে।
● যে কোনো দেশ যে কোনো সময়ে দেশগুলিতে সঞ্চিত আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট হারে গোল্ড বিনিময় করে নিতে পারবে এবং এই ফিক্সড রেট হল প্রতি 35 ডলারের বিনিময়ে এক আউন্স গোল্ড।
ওয়ার্ল্ড কারেন্সি-র মতো এতবড় একটি সিদ্ধান্ত আমেরিকার পক্ষে গিয়েছিল।
তার কারণ-
শুধুমাত্র সেইসময় নয় বর্তমানেও আমেরিকার কাছে আছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গোল্ড এর ভাণ্ডার। তাই পৃথিবীব্যাপী মুদ্রার বদলে গোল্ড এর বিনিময় আমেরিকা ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। এরপর থেকে সারা পৃথিবীতে আমেরিকান ডলার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এর মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়। এবং 1944 সালে ব্রেটন উডস কনফারেন্স-এ গৃহীত এই পদ্ধতি ব্রেটন উডস সিস্টেম নামে পরিচিতি পায়।কিন্তু 1955 সাল থেকে শুরু হওয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, অন্যান্য দেশগুলি লক্ষ্য করে যে আমেরিকা নিজের মর্জি মত ডলার ছাপিয়েই চলেছে। শুধু তাই নয় আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক পৃথিবীর কোনো দেশকেই তাদের ডলার প্রিন্ট প্রেসের অডিট করতে দিতে রাজি ছিল না। এই বেহিসাবী কর্মকান্ডের ফলে আমেরিকান ডলারের মূল্য কমতে শুরু করে।
এরপর 1971 সালে ফ্রান্স যখন তাদের দেশে সঞ্চিত আমেরিকান ডলারের বদলে নিজেদের গোল্ড ফেরত চায়, সেইসময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তা দিতে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয় আমেরিকা 1971 সালের 15ই আগস্ট ব্রেটন উডস সিস্টেম থেকে সাময়িক ভাবে বেরিয়ে আসে। আর এর ফলে সারা পৃথিবীতে আমেরিকান ডলারের মূল্য শুন্য হয়ে যায়। কিন্তু ইতিমধ্যে ব্রেটন উডস সিস্টেম-এর মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি দেশে আমেরিকান ডলার বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডার হিসাবে সঞ্চিত ছিল। আর শুধু আমেরিকার কাছেই নয় রাশিয়া ও চীনের কাছেও পরমাণু অস্ত্র মজুত ছিল। এর ফলে আমেরিকাকে তাদের ডলারের বদলে কিছু না কিছু তো দিতেই হতো।
আর একটি ভাবার মত বিষয় হল, আমেরিকা যেমন তাদের আমেরিকান ডলারকে বিনামূল্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বানাতে পেরেছিল। ঠিক তেমনি আরেকটি দেশ প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে বিনামূল্যে পেট্রোলিয়ামের অফুরন্ত ভান্ডার পেয়েছিল। আর সেই দেশ হল সৌদি আরব।
এই সময়কালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবকে নিজের ফায়দা হিসাবে ব্যবহার করে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সৌদি কিং ফয়সল এরসঙ্গে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুসারে সৌদি আরব সারা বিশ্বে আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে তাদের দেশের পেট্রোলিয়াম বিক্রি করতে রাজি হয়। আর বিনিময়ে আমেরিকা সৌদি আরবকে অস্ত্র এবং সামরিক সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। শুধু সৌদি আরব নয় আমেরিকা এই প্রস্তাব সমস্ত পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারী দেশ সমূহকে দেয়।
আবার এই সময়কালের মধ্যে আরব ও তার প্রতিবেশী দেশসমূহ অর্থাৎ আরব নেশন ইজরায়েলের সঙ্গে সিক্স ডে ওয়ার যুদ্ধে মারাত্বক ভাবে হেরে যায়।
তাই আমেরিকা যখন পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারী দেশসমূহ অর্থাৎ OPEC নেশনকে সামরিক সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় তার মানে এই দাড়ায় যে, হয় চুপচাপ আমেরিকান ডলারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি কর নাহলে আরেকটা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।
এরফলে বেচারা দেশগুলি যারা এতদিন পর্যন্ত পেট্রোলিয়াম নিজেদের মুদ্রা অথবা গোল্ড এর বিনিময়ে রপ্তানি করছিল তারাই আমেরিকান ডলার, কাগজের টুকরো ছাড়া যার কোনো মূল্যই সেইসময় ছিলনা, তার বিনিময়ে বিক্রি করতে শুরু করে।
আর এর সাথে সাথেই পৃথিবীতে জন্ম নেয় পেট্রোডলার অর্থাৎ ডলার ফর পেট্রোলিয়াম। এর ফলে সমগ্র ওপেক নেশন আমেরিকার হাতের মুঠোয় চলে আসে। এবং এই একটিমাত্র সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকা পাওয়ারফুল হয়ে যায়। কারণ আমেরিকান ডলার সেইসময় যার মূল্য ছিল zero, পুনরায় মূল্যবান হয়ে যায়।
শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশ যারা ডলারের বিনিময়ে গোল্ড আমেরিকাকে দিয়েছিল সেই গোল্ড ফিরিয়ে দেওয়া থেকে দায়মুক্ত হয়ে যায়।
ওপেক নেশন আমেরিকার এই চালাকি যে, বুঝতে পারেনি তা নয়। কিন্তু শক্তিশালী আমেরিকার বিরুদ্ধে তাদের করার কিছু ছিল না আর বর্তমানেও নেই।
কেননা যখনই কোনো দেশ আমেরিকার এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই তাদের সাদ্দাম হোসেন ও গাদ্দাফি-র কথা মনে পড়ে যায়।
এইভাবে আমেরিকান ডলার যা কিনা আন্তর্জাতিক মুদ্রার মর্যাদা পেয়েছিল বিনামূল্যে, তার দাপট আজ পর্যন্ত বজায় আছে।
Share the post
আরও খবর
বাছাই খবর


এক নজরে খবর
শহর   রাজ্য   দেশদুনিয়া   আন্তর্জাতিক   খেলার সময়   ব্যবসা   বাণিজ্য   সম্পাদকীয়   ফটো গ্যালারি   বিঞ্জান   বিনোদন   লাইফস্টাইল   ভিডিও

satta king tw